Tuesday, July 11, 2017

বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানে যাবেন যেভাবে



ভ্রমণের জন্য অনেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামকে পছন্দের তালিকায় রাখেন। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান এই ৩টি পার্বত্য জেলা ভ্রমণ যদিও তুলনামূলকভাবে একটু বেশি কঠিন। চট্টগ্রাম থেকে ৯২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে পাহাড়ি শহর বান্দরবান। অবারিত সবুজের পাশাপাশি বান্দরবানে রয়েছে দর্শনীয় অনেক স্পট। 

বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানগুলো হচ্ছে নীলগিরি, স্বর্ণমন্দির, মেঘলা, শৈল প্রপাত, নীলাচল, মিলনছড়ি, চিম্বুক, সাঙ্গু নদী, তাজিনডং, কেওক্রাডং, জাদিপাই ঝরনা, বগা লেক, মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স, প্রান্তিক লেক, ঋজুক জলপ্রপাত, নাফাখুম জলপ্রপাত। এগুলোর পাশাপাশি বান্দরবানে রয়েছে কয়েকটি ঝিরি চিংড়ি, পাতাং, রুমানাপাড়া। 

যাতায়াত : ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে প্রথমে চট্টগ্রাম তারপর চট্টগ্রাম থেকে সোজা বান্দরবান। বাংলাদেশের অনেক জায়গা থেকে সরাসরি বান্দরবান যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে বান্দরবান পর্যন্ত ডাইরেক্ট নন এসি ভাড়া জনপ্রতি ৬২০ টাকা। এস আলম, হানিফ, ইউনিক ইত্যাদি বাস ছাড়ে ফকিরাপুল ও কমলাপুর রেল স্টেশনের বিপরীত কাউন্টার থেকে। 

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান : বহদ্দারহাট টার্মিনাল থেকে পূরবী এবং পূর্বাণী নামক দুটি ডাইরেক্ট নন এসি বাস আছে। ৩০ মিনিট পরপর বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১১০ টাকা। 

কোথায় থাকবেন : হোটেল ফোর স্টার : (বান্দরবান সদর), হোটেল থ্রি স্টার (বান্দরবান বাস স্টপেজের পাশে), হোটেল প্লাজা (বান্দরবান সদর), হোটেল গ্রিন হিল (বান্দরবান সদর), হোটেল হিল বার্ড (বান্দরবান সদর), হোটেল পূরবী (বান্দরবান সদর)। 

নীলগিরি 

নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রের উচ্চতা প্রায় ৩ হাজার ফুট। এটি বান্দরবান জেলার থানছি উপজেলায় অবস্থিত। বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থিত নীলগিরির অবস্থান। এ পর্বতের পাশেই রয়েছে উপজাতি সম্প্রদায় ম্রো পল্লি। যাদের বিচিত্র সংস্কৃতি দেখার মতো। বর্ষা মৌসুমে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র থেকে মেঘ ছোঁয়ার দুর্লভ সুযোগ থাকে। নীলগিরি থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায় শুষ্ক মৌসুমে। 

যাতায়াত : পর্যটকদের নীলগিরি যেতে হলে বান্দরবান জেলা সদরের রুমা জিপ স্টেশন থেকে থানছিগামী জিপ অথবা বাসে করে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়া যায়। বান্দরবান জিপ স্টেশন থেকে জিপ, ল্যান্ড রোভার, ল্যান্ড ক্রুজারসহ অন্যান্য হালকা গাড়ি ভাড়ায় পাওয়া যায়। নীলগিরি যাওয়ার পথে সেনা চেকপোস্টে পর্যটকদের নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হবে। বান্দরবান জেলা সদর থেকে সাধারণত বিকেল ৫টার পর নীলগিরির উদ্দেশে কোনো গাড়ি যেতে দেয়া হয় না। নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র বান্দরবান জেলা সদর থেকে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যায়। এ ছাড়া নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র রাত্রিযাপনের জন্য বান্দরবান সদর সেনা রিজিয়নে বুকিং দেয়া যায়। নীলগিরি পর্যটনে গিয়ে সরাসরিও বুকিং করা যায়। বান্দরবান জেলা সদর থেকে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় অধিকাংশ পর্যটক দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসেন। 

স্বর্ণমন্দির 



বান্দরবানের উপশহর বালাঘাটাস্থ পুলপাড়া নামক স্থানে এর অবস্থান। বান্দরবান জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ৪ কিলোমিটার। সুউচ্চ পাহাড়ের চুড়ার তৈরি সুদৃশ্য এ প্যাগোডা। এটি বুদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটি পবিত্র তীর্থস্থান । এখানে দেশ বিদেশ থেকে অনেক বুদ্ধ ধর্মাবলম্বী দেখতে এবং প্রার্থনা করতে আসেন। এর অপর নাম মহাসুখ প্রার্থনা পূরক বুদ্ধধাতু চেতী। গৌতম বুদ্ধের সময়কালে নির্মিত বিশ্বের সেরা কয়েকটি বুদ্ধ মূর্তির মধ্যে একটি এখানে রয়েছে। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। মন্দিরটি পূজারিদের জন্য সারাদিন খোলা থাকে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী দর্শনার্থীদের জন্য বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়। প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১৫ টাকা। 

মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র 

বান্দরবান শহরের প্রবেশদ্বার বান্দরবান কেরানীহাট সড়কের পাশেই পার্বত্য জেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স অবস্থিত। পাহাড়ের খাদে বাঁধ নির্মাণ করে কৃত্রিম হ্রদের সৃষ্টি করা হয়েছে। বান্দরবান শহর থেকে এর দূরত্ব ৪ কিলোমিটার। পর্যটকদের চিত্তবিনোদনের জন্য এখানে রয়েছে শিশুপার্ক, নৌকা ভ্রমণের সুবিধা, ঝুলন্ত সেতুর মাধ্যমে চলাচলের ব্যবস্থা এবং সাময়িক অবস্থানের জন্য একটি রেস্ট হাউস। 

যাতায়াত : মেঘলায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের খাবার ও রাত্রিযাপনের জন্য বান্দরবান শহরে কিছু মাঝারি মানের হোটেল রয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের জন্য খাবার ও রাত্রিযাপনের জন্য পাশেই সুব্যবস্থা রয়েছে । মেঘলার পাশেই রয়েছে বান্দরবান পর্যটন মোটেল ও হলিডে ইন নামে দুইটি আধুনিক মানের পর্যটন কমপ্লেক্স। এখানে এসি ও নন এসি রুমসহ রাত্রিযাপন ও উন্নতমানের খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। 

শৈলপ্রপাত 

বান্দরবান রুমা সড়কের ৮ কিলোমিটার দূরে শৈলপ্রপাত অবস্থিত। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সৃষ্টি। ঝরনার হিমশীতল পানি এখানে সর্বদা বহমান। এই ঝরনার পানিগুলো খুবই স্বচ্ছ এবং হিমশীতল। বর্ষাকালে এ ঝরনার দৃশ্য দেখা গেলেও ঝরনাতে নামা দুষ্কর, বছরের বেশির ভাগ সময় দেশি-বিদেশি পর্যটকে ভরপুর থাকে। রাস্তার পাশে শৈলপ্রপাতের অবস্থান হওয়ায় এখানে পর্যটকদের ভিড় বেশি দেখা যায়। এ এলাকায় দুর্গম পাহাড়ের কোল ঘেষে আদিবাসী বম সম্প্রদায় বসবাস করে। 

যাতায়াত : বান্দরবান শহর থেকে টেক্সি, চাঁদের গাড়ি কিংবা প্রাইভেট কার ও জিপ ভাড়া করে শৈলপ্রপাতে যাওয়া যায়। শহর থেকে জিপ গাড়িতে ৬০০-৭০০ টাকা এবং চাঁদের গাড়িতে ৪৫০-৫০০ টাকা লাগবে। 

নীলাচল 

বান্দরবান জেলা শহরের নিকটবর্তী পর্যটন কেন্দ্র। এটি জেলা সদরের প্রবেশ মুখ টাইগারপাড়ার নিকট পাশাপাশি অবস্থিত। নীলাচলের পাশাপাশি রয়েছে শুভ্রনীলা নামক আরেকটি পর্যটনস্পট। নীলাচল জেলা প্রশাসন ও শুভ্রনীলা বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ দুটি পর্যটন কেন্দ্র পরিচালিত হয় । এ পর্যটন কেন্দ্রের উচ্চতা প্রায় ১৭০০ ফুট। বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে এই পর্যটন কেন্দ্র অবস্থিত। এ পাহাড়ের উপর নির্মিত এ দুটি পর্যটন কেন্দ্র থেকে পার্শ্ববর্তী এলাকার দৃশ্য দেখতে খুবই মনোরম। 

যাতায়াত : বান্দরবান শহরের বাস স্টেশন থেকে জিপ, ল্যান্ড ক্রুজার, ল্যান্ড রোভার ভাড়া নিয়ে যেতে হবে অথবা বান্দরবান শহরের সাঙ্গু ব্রিজের কাছে টেক্সি স্টেশন থেকে টেক্সি ভাড়া নিয়ে নীলাচল ও শুভ্রনীলায় যাওয়া যায় । 

মিলনছড়ি 

মিলনছড়ি বান্দরবান শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে শৈলপ্রপাত বা চিম্বুক যাওয়ার পথে পড়ে। এখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি আছে। পাহাড়ের অতি উচ্চতায় রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পূর্ব প্রান্তে অবারিত সবুজের খেলা এবং সবুজ প্রকৃতির বুক চিরে সর্পিল গতিতে বয়ে গেছে সাঙ্গু নদী। 

চিম্বুক 

বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম পর্বত। চিম্বুক সারা দেশের কাছে পরিচিত নাম। বান্দরবান জেলা শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ের অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ২৫০০ ফুট। চিম্বুক যাওয়ার পথে সাঙ্গু নদী চোখে পড়ে। পাহাড়ের মাঝে আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে পৌঁছাতে হয় চিম্বুক পাহাড়ে। চিম্বুক পাহাড় থেকে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের নিচ দিয়ে মেঘ ভেসে যাওয়ার দৃশ্য অবলোকন করা যায়। এখান থেকে পার্শ্ববর্তী জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলাকে দেখা যায়। বর্ষা মৌসুমে চিম্বুক পাহাড়ের পাশ দিয়ে ভেসে যাওয়া মেঘ দেখে মনে হয় মেঘের স্বর্গরাজ্য চিম্বুক। মেঘের হালকা হিম ছোঁয়া যেন মেঘ ছোঁয়ার অনুভূতি।চিম্বুক থানছি সড়কের দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় এখানে হোটেল বা রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠেনি। জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে একটি রেস্ট হাউস আছে। জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে রাত্রিযাপনের সুযোগ রয়েছে। চিম্বুকের পাশে সেনাবাহিনীর ক্যান্টিন রয়েছে। এখানে সকালের নাস্তা ও দুপুরে খাবার পাওয়া যায়। এছাড়া খাবারের জন্য বান্দরবান থেকে চিম্বুক যাওয়ার পথে মিলনছড়ি ও শাকুরা নামে ২টি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। 

যাতায়াত : চিম্বুক যেতে হলে বান্দরবান শহরের রুমা বাস স্টেশন থেকে চাঁদের গাড়ি হিসেবে পরিচিত জিপ, ল্যান্ড ক্রুজার, ল্যান্ড রোভার, পাজেরো এবং বান্দরবান-থানছি পথে যাতায়াতকারী বাস ভাড়া নিতে হবে (স্পেশাল বাস যা দুর্গম পাহাড়ি পথে চলাচল করতে সক্ষম)। চিম্বুক থানছি পথে বিকেল ৪টার পরে কোনো গাড়ি চলাচল করে না বিধায় পর্যটকদের ৪টার মধ্যে ফিরে আসা উচিত। 

সাঙ্গু নদী 

পূর্বের অতিউচ্চ পর্বত শীর্ষ থেকে সাঙ্গু নদী নেমে এসে বান্দরবান শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশে গেছে। বান্দরবান শহরের পূর্বে পাশে পাহাড়ি ঢালে বয়ে চলা সাঙ্গু নদী পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ। 

বগা লেক 

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে বগা লেক। কেওক্রাডংয়ের কোল ঘেষে বান্দারবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে এবং রুমা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। পাহাড়ের উপরে প্রায় ১৫ একর জায়গাজুড়ে বগা লেকের অবস্থান। লেকের পানি দেখতে প্রায় নীল রঙের। লেকটির পাশে বাস করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র উপজাতীয় বম ও খুমী সম্প্রদায়।রাত্রিযাপনের জন্য বগা লেকে জেলা পরিষদের অর্থায়নে একটি রেস্ট হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় বম উপজাতি সম্প্রদায় কিছু ঘর ভাড়ায় দিয়ে থাকে । বগা লেকের পাড়েই বসবাসরত বম সম্প্রদায় পর্যটকদের জন্য রান্নাবান্নার ব্যবস্থা করে থাকে । 

যাতায়াত : শুষ্ক মৌসুমে বান্দরবান জেলা সদরের রুমা জিপ স্টেশন থেকে রুমাগামী জীপে করে রুমা সেনা গ্যারিসন (রুমা ব্রিজ) পর্যন্ত যাওয়া যায়। সেখান থেকে নৌকায় করে ২০ মিনিট পথ পাড়ি দিয়ে রুমা উপজেলা সদরে যেতে হয়। বর্ষাকালে রুমাগামী জিপ কইক্ষ্যংঝিড়ি পর্যন্ত যায় । তারপর ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে প্রায় ১ ঘণ্টার অধিক পথ পাড়ি দিয়ে রুমা সদরে যেতে হয় । রুমা থেকে পায়ে হেটে অথবা জিপে করে বগা লেকে যেতে হয় । বর্ষা মৌসুমে বগা লেক যাওয়া নিতান্তই কষ্টসাধ্য তাই বগালেক ভ্রমণে শীতকালকে বেছে নেওয়া শ্রেয়। 

কেওক্রাডং ও তাজিনডং 

বেসরকারি হিসাবে পর্বতশৃঙ্গ তাজিনডং বাংলাদেশের চতুর্থ। উচ্চতা ১২৮০ মিটার। কেওক্রাডং বাংলাদেশের ৩য় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। উচ্চতা ১২৯০ ফুট। স্থানীয় উপজাতীয়দের ভাষায় ‘তাজিন’শব্দের অর্থ বড় আর ‘ডং’শব্দের অর্থ পাহাড় যা একত্রিত করলে হয় তাজিনডং। এটি বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার রেমাক্রি পাংশা ইউনিয়নে অবস্থিত। রুমা উপজেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পর্বতের অবস্থান। বর্ষা মৌসুমে তাজিনডং যাতায়াত অত্যন্ত কষ্টকর। শুষ্ক মৌসুমে অনেক পর্যটককে এ্যাডভেঞ্চার হিসেবে পায়ে হেঁটে তাজিনডং যেতে দেখা যায়। 

যাতায়াত : পর্যটকদের তাজিনডং যেতে হলে বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রথম যেতে হবে রুমা উপজেলা সদরে। রুমা উপজেলা যাত্রাপথে রুমা সেনা গ্যারিসনে পর্যটকদের নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হবে। পরবর্তীতে রুমা উপজেলা সদর সেনা ক্যাম্পে আবারও রিপোর্ট করতে হবে। রুমা উপজেলা সদর থেক সাধারণত বিকাল ৪টার পরে বগা লেক, কেওক্রাডং বা তাজিনডংয়ের উদ্দেশে যেতে দেয়া হয় না। যাত্রা যদি হয় বর্ষা মৌসুমে তাহলে বান্দরবান শহরের রুমা জিপ স্টেশন থেকে রুমাগামী চাঁদের গাড়িতে করে কৈক্ষ্যং ঝিরি যেতে হবে। তারপর নৌকায় ১ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে রুমা সদর। যদি শীতের মৌসুম হয় তাহলে জিপে করে রুমা উপজেলা সদরের কাছে বোটঘাটায় পৌঁছে দেবে গাড়ি, সেখান থেকে নৌকায় করে ১৫-২০ মিনিটের নৌকা ভ্রমণ শেষ রুমা উপজেলা সদরে পৌঁছানো যাবে। 

জাদিপাই জলপ্রপাত 

কেওক্রাডং থেকে পায়ে হেঁটে ১ ঘণ্টায় জাদিপাই জলপ্রপাতে পৌঁছানো যায়। কেওক্রাডং থেকে নিচে নামতে হয় যাওয়ার সময়। ফিরে আসার সময় উপরে উঠতে হয় বিধায় সময় ২ ঘণ্টার মতো লাগে। তবে নিচে নামাটাই বিপদজনক। শেষের কিছু অংশ বেশ পিচ্ছিল। দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে। 

প্রান্তিক লেক 

চট্টগ্রাম-বান্দরবান জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত প্রান্তিক লেক বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের হলুদিয়ার নিকটবর্তী স্থানে এটি অবস্থিত। কেরানীহাট থেকে ২০ মিনিট গাড়ি চালালে এ লেকে পৌঁছানো সম্ভব। জেলা সদর থেকে প্রান্তিক লেকের দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। প্রায় ২ হাজার ৫ শত একর এলাকা নিয়ে প্রান্তিক লেকের অবস্থান। রাত্রিযাপনের জন্য মেঘলা অথবা বান্দরবান শহরে ফিরে যেতে হবে। বান্দরবান শহর থেকে কেরানীহাটগামী বাসে হলুদিয়া নামক স্থানে নেমে টেক্সি বা রিকশা করে ৩ কিলোমিটার যেতে হবে। বান্দরবান শহর থেকে টেক্সি বা ল্যান্ড ত্রুজার রির্জাভ করে নিয়ে যাওয়া যায়। 

ঋজুক জলপ্রপাত 

প্রাকৃতিক পাহাড়ি পানির অবিরাম এ ধারা জেলা সদর হতে ৬৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রুমা উপজেলায় অবস্থিত। নদী পথে রুমা হতে থানচি যাওয়ার পতে সাঙ্গু নদীর পাড়ে ৩০০ ফুট উঁচু থেকে সারা বছরই এ জলপ্রপাতটির রিমঝিম শব্দে পানি পড়ে। রুমা হতে ইঞ্জিনচালিত দেশি নৌকায় সহজেই এ স্থানে যাওয়া যায়। মারমা ভাষায় একে রী স্বং স্বং বলা হয়। রুমা বাজার থেকে নৌকা ভাড়া করে যাওয়া যায়। 

মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স 

বান্দরবান জেলাধীন ফাঁসিয়াখালী-লামা-আলীকদম সড়কের ১৬ কিলোমিটার পয়েন্টে মিরিঞ্জা পর্যটন কেন্দ্রটির অবস্থান। নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ স্থানটিতে পর্যটন কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে একটি আকর্ষণীয় ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে গড়ে উঠেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,৫০০ ফুট উপরে এটি অবস্থিত। অনুকূল আবহাওয়ায় বঙ্গোপসাগরসহ মহেষখালী দ্বীপ এবং সাগরে চলাচলকারী দেশি-বিদেশি জাহাজ সহজেই দেখা যায় এ স্থান থেকে। প্রায় ১০০০ ফুট গভীর ঝিরি থেকে উৎসারিত জল সিঞ্চনের বিরামহীন কলরব। পাহাড়টির সম্মুখভাগ টাইটানিক জাহাজের আকৃতির মতো হওয়ায় এটি ‘টাইটানিক পাহাড়’হিসেবেও পরিচিত। 

নাফাখুম জলপ্রপাত 

বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রি স্থানটি সাঙ্গু নদীর উজানে একটি মারমা বসতি। মারমা ভাষায় ‘ষুম’মানে জলপ্রপাত। রেমাক্রি থেকে তিন ঘণ্টার হাঁটা পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় আশ্চর্য সুন্দর সেই জলপ্রপাতে, যার নাম ‘নাফাখুম’। রেমাক্রি খালের পানি প্রবাহ এই নাফাখুমে এসে বাঁক খেয়ে হঠাৎ করেই নেমে গেছে প্রায় ২৫-৩০ ফুট....। প্রকৃতির খেয়ালে সৃষ্টি হয়েছে চমৎকার এক জলপ্রপাত! সূর্যের আলোয় যেখানে নিত্য খেলা করে বর্ণিল রংধনু! ভরা বর্ষায় রেমাক্রি খালের জলপ্রবাহ নিতান্ত কম নয়। 



যাতায়াত : বান্দরবান শহর থেকে থানচি উপজেলা সদরের দূরত্ব ৮২ কিলোমিটার। রিজার্ভ চাঁদের গাড়িতে বান্দরবান থেকে থানচি যেতে সময় লাগবে ৩ ঘণ্টা। বর্ষায় ইঞ্জিন বোটে থানচি থেকে তিন্দু যেতে সময় লাগবে আড়াই ঘণ্টা। তিন্দু থেকে রেমাক্রি যেতে লাগবে আরো আড়াই ঘণ্টা। এই পাঁচ ঘণ্টার নৌ-পথে আপনি উজান ঠেলে উপরের দিকে উঠতে থাকবেন। শীতের সময় ইঞ্জিন বোট চলার মতো নদীতে যথেষ্ট গভীরতা থাকে না। তখন ঠ্যালা নৌকাই একমাত্র বাহন। থাকা : থাকার জন্য যেতে হবে তিন্দু, রেমাক্রি। মারমাদের বাঁশ-কাঠের বাড়িতে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে। মারমাদের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই খুব অল্প টাকায় এমন থাকা-খাওয়ার সুবিধা রয়েছে।

No comments:

Post a Comment